Green To The Gallery

Jairam Ramesh created hope, now it is time for him to deliver

New Indian Express, 15 Oct, 2009

A lot has changed in the Ministry of Environment and Forests (MoEF) in the last four months. A Congress minister has taken charge — a minister who looks confident, talks smooth, means business and loves attention. And he has unleashed his doctrine of pop conservation.

Of course, the new MoEF has taken a few sound decisions. For example, it has introduced tripartite MoUs among the Centre, respective states and the National Tiger Conservation Authority (NTCA). It has started setting up tiger protection forces with young recruits and rigorous training. It has also decided to absorb youth from forest communities as guards on contract.

All these proposals, however, were in the pipeline for months — thanks to NTCA’s consistent attempts at reforms. To Jairam Ramesh’s credit, he implemented them quickly.

There are a number of similarly sound proposals waiting for the new minister’s attention. A separate wildlife secretariat and a specialised sub-cadre, reforms to build scientific capacity, relocation of villages from critical forest areas, restoration of vital forest corridors — the list is long. Unfortunately, Ramesh has been a little too busy for all these.

Within weeks of taking charge, the new minister sought credit for unlocking the Rs 11,000-crore Compulsory Afforestation Fund Management and Planning Authority (CAMPA) booty. Now the states will receive Rs 1,000 crore every year for afforestation — a big boost as the cumulative green budget of all states stands at just Rs 800 crore.

But our governments have a notorious past when it comes to utilisation of funds. To cite just one example, records from 16 tiger reserves show that in 2008-’09 alone, Rs 21 crore out of a total central allotment of Rs 93 crore remained unspent. Most government agencies fare worse even after they try to rush expenditure in useless, ad hoc projects towards the end of every fiscal cycle.

The CAMPA funds will achieve little without scientific planning and professional monitoring. For example, the money could be utilised to restore some of India’s most critical forest corridors. But why take the trouble when Rs 11,000 crore anyway makes for good headlines?

During his first official visit to Corbett Tiger Reserve in June, Ramesh spoke a lot of sense before dropping a bombshell. Micro-light aircraft will be acquired, he announced, to help monitoring and surveillance. After all, they use these fancy flying machines in Africa.

The Corbett staff was left confounded. They slowly gathered courage to point out that the honourable minister’s idea was not quite practical. Surely the Corbett staff needed better equipment, vehicles and manpower. But micro-lights, they pointed out, fit the bill for monitoring open African savannas, not dense canopies that make much of India’s forests visually impenetrable from the sky.

Moreover, only five tiger reserves in India are big enough to spread over 2,000 sq km each. While it would be tough to manoeuvre a micro-light over such small forest patches, effective ground monitoring of such limited stretches is always possible (except perhaps in Sunderbans and Namdapha). Then, of course, there are other tricky issues of felling trees to clear space for runways, etc. Hopefully, bureaucrats at MoEF will be able to convince their minister to stay grounded.


But Jairam Ramesh has already moved on to newer stunts. His recent exclamation in Bhopal on how holding toxic waste did not make him cough or his eager handling of a python for the camera at a national park can be dismissed as naiveté, But it gets a little serious when he attempts to deflect attention from real issues in Parliament by announcing plans to reintroduce cheetahs.

The biggest argument for reintroduction is that the cheetah will become the mascot of our neglected grasslands and help its protection. Incidentally, the same grasslands are also home to the amazing still-not-extinct great Indian bustards. If we show a fraction of the enthusiasm we have for the cheetah, we can still bring back this majestic bird from the brink of extinction.

Even if the cheetah project doesn’t demand government funds, it will require vast tracts of land that only the government can facilitate. The few dozens of surviving bustards need only small undisturbed corners of fields to hatch their eggs. If Ramesh cannot offer incentives to encourage a few farmers to leave small portions of fields uncultivated for bustard nesting, his ministry has no business discussing thousands of hectares for some exotic experiment.

Then, there is also the question of accountability. Ramesh has been talking tough on environmental clearances but his ministry is silent about the fiasco over clearing Mayawati’s memorial park project on a green expanse in Noida. While the minister was in China last month, the MoEF reversed the stand earlier taken by its own regional office at Lucknow and gave a clean chit to the Uttar Pradesh chief minister.

Following the mass outrage, the ministry swung into damage control mode and again changed its stand. But till date, no one has been held responsible for trying to destroy the case against the Uttar Pradesh government. If Mayawati is eventually let off in the case, the appointment of the next chief secretary at Lucknow will perhaps throw some light on the mystery.

It will be indeed a tragedy if the great green expectation triggered by Ramesh’s appointment fizzles out too soon. To be fair, nobody expected Ramesh to turn any wheel in his first 100 days in office, but many believed it was time enough for him to at least get a firm grip.

Better late than never.

(The author is a journalist and filmmaker. E-mail: mazoomdaar@gmail.com)

কোথায় পাবো তারে

আনন্দবাজার পত্রিকা ৯ অক্টোবর ২০০৯

জঙ্গলে তার মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চের কথা ছেড়েই দিলাম, ঝোপের ফাঁকে এক ঝলক-ই যথেষ্ট। ভয়ংকর কি কখনো সুন্দর হতে পারে? বা অতিকায় ক্ষিপ্র? আভিজাত্যে কি মিশে থাকতে পারে ধুর্ততা? শুকনো পাতার ওপর নিঃসাড়ে পা ফেলে যেতে যেতে হঠাত থমকে তার চকিতে ঘাড় ফিরিয়ে তাকানো, সেই দৃষ্টিতে মিশে থাকা আত্মবিশ্বাস এবং অবিশ্বাস, আর যেকোনো মুহুর্তে একটা আলতো লাফে অতবড় অবয়বটার বেমালুম গায়েব হয়ে যাওয়া – না দেখলে বনের বাঘ ব্যাপারটা বুঝিয়ে ওঠা কঠিন।

মনে পড়ছে ২০০৫-এর সেই করবেট কান্ড। ঢিকালায় এক বাঘিনী তার চার সন্তানকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ট্যুরিস্টদের দর্শন দিচ্ছিলেন। ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের ক্যান্টিনের পিছনে ফেলে দেওয়া উদ্বৃত্ত খাবার চাখতে রোজই কিছু বুনো শুয়োর ভিড় করতো। গরম বাড়তেই চার বাড়ন্ত বাচ্চার পেট পালতে নাজেহাল বাঘিনী সুলভ শিকারের আশায় সন্ধ্যের পর ওই আস্তাকুঁড়ে হানা দিতে শুরু করে।

মাস দুয়েক যাবত সাপ্তাহিক শূয়োর শিকার নির্বিঘ্নেই চলছিল। কিন্তু ২৬-শে মে রাতে ক্যান্টিনের কর্মচারী মদন পান্ডে তার নির্জন স্টাফ কোয়ার্টারের পৌছতে একটু বেশী-ই দেরী করে ফেলেন। ওদিকে তখনই বাঘিনীর এক লায়েক সন্তান শিকার-শিকার খেলার মেজাজে মা-কে ছেড়ে আস্তাকুঁড় ছেড়ে একটু এগিয়ে গিয়েছিল। বেচারার দোষ নেই, চাবি হাতে তালার ওপর ঝোঁকা অবস্থায় পান্ডেজিকে পেছন থেকে দেখে অনভিগ্ম চোখে জংলী শিকার মনে হতেই পারে। পান্ডেজি-র কপাল ভাল, কাঁচা বাঘের হাতে পড়ায় তিনি রক্তক্ষয় আর অঙ্গহানি-র ওপর দিয়েই সে যাত্রা রক্ষা পান।

নেহাত-ই দুর্ঘটনা। কিন্তু করবেটে মানুষখেকোর গুজব রটতে বেশী সময় লাগে না। দুদিনের মধ্যেই ঢিকালা হাউসফুল। তারপর সেই ঝড়ের সন্ধ্যে।

সেদিন বিকেল থেকেই আকাশ অন্ধকার। ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের মাঝখানের মাঠে কচি-কাঁচারা জঙ্গল সাফারি থেকে ফিরে খেলায় ব্যস্ত। বড়রা চা-কফি পর্ব সেরে বাঘ না দেখতে পাওয়ার অনুযোগ নিয়ে কাছে ভীড় করেছেন। হঠাত বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি আর দমকা ঝড়ে পাওয়ার কাট। অন্ধকারে দৌড়ঝাঁপ শুরু হতেই, একটা লম্বা বাজ পড়ল খানখান শব্দে । বেশ ক’মুহুর্তের জন্য দিনের মত স্পষ্ট আলোয় দেখা গেল পাঁচ-পাঁচটি বাঘ -- ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের ঠিক মাঝবরাবর এগিয়ে আসছে।

আসলে রামগঙ্গা নদীর চর থেকে ওই ঢিকালা আস্তাকুঁড়ে পৌছবার সোজা রাস্তা ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের মাঝখান দিয়ে। নিজের রাজত্বে ট্যুরিস্ট-এর ভিড় এড়াতে ঘুরপথে যাতায়াত বাঘিনীর নিশ্চয় মর্যাদায় বেধেছিল। চার লায়েক সন্তানকে নিয়ে তিনি তো নির্বিবাদে মিনিট দুয়েকের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেলেন। পেছনে রেখে গেলেন আতঙ্কে দৌড়তে গিয়ে হাড়ভাঙ্গা রেঞ্জ অফিসার রাওয়াত সাহেব, আর এক দল ফ্যাকাশেমুখো ট্যুরিস্ট।

সে’কদিন ঢিকালায় নাইট কারফিউ-তে সন্ধ্যে সাতটার মধ্যেই ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যেতো। ট্যুরিস্টরা প্যাকড্‌ ডিনার নিয়ে নিজের নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে জানালার পাশে বাঘ পরিবারের হেটেঁ যাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতো ঘন্টার পর ঘন্টা । ঘরে বসে বাঘ দেখার লোভে রাতের পর রাত কারো মুখেই কোনো অভিযোগ শুনিনি । এ এক আশ্চর্য আকর্ষন। সাধে কি আর ভারতের বিভিন্ন বাঘবনে লাখ-লাখ দেশি-বিদেশি ট্যুরিস্টের ভীড়?


বাঙ্গালীর অবশ্য বেঙ্গল টাইগারের ওপর স্বভাবতই বিশেষ অধিকার। রসিকতা নয়, দেশের নানা জঙ্গলের হোটেল আর গেস্টহাউস রেজিস্টারে বাঙ্গালীর এই ব্যাঘ্রব্যাকুলতার যথেষ্ট প্রমাণ মজুত। ভিন প্রদেশে ছোটা ছাড়া গতি নেই কারণ সুন্দরবনে কয়েক ডজন, উত্তরবঙ্গে গুটিকয়, আর বেহালায় সৌরভ গাঙ্গুলী ছাড়া যাবতিয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারেরই সাবেক নিবাস বাংলার বাইরে।

কিন্তু সরিস্কা থেকে নামডাফা আর রাজাজি থেকে বান্দিপুর, যেখানেই কাজের ফাঁকে বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী ট্যুরিস্টদের সাথে আলাপ হয়েছে, অধিকাংশেরই শুনেছি এক অভিযোগ। এতবার জঙ্গলে গিয়ে তাদের একবার-ও বাঘের দেখা মেলেনি।

ইন্টারনেটে গুগল্‌-এ টাইগার টাইপ করলে নয় কোটির বেশি রেসাল্ট পাওয়া যায়। সারা দেশের জঙ্গল ঢুঁড়লে মাত্র ১৪০০ বাঘ। আবার এই ১৪০০ বাঘের বেশীর ভাগই যেহেতু অরণ্যের এমন এলাকার বাসিন্দা যেখানে সাধারন ট্যুরিস্টের প্রবেশাধিকার নেই, দু-চার দিন কোনো জঙ্গলের ট্যুরিসম্‌ জোন সকালে-বিকেলে জীপে-হাতিতে চষে ফেললেই যে এক-আধটা বাঘ দেখতে পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

শুধু যে দ্রুত কমতে থাকা সংখ্যাই বাঘের বিরল দর্শনের কারণ তা কিন্তু নয়। নাকের ডগায় থেকেও দেখা দিতে না চাইলে জঙ্গলে বাঘের দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমাদের মত শহুরে আড়াই-ইন্দ্রিয়ওয়ালাদের কথা ছেড়েই দিলাম, সারা জীবন জঙ্গলে কাটানো ওস্তাদ গাইড এমনকি পোষা হাতিকেও বাঘ ধন্ধে ফেলে দেয়।

বছর কয়েক হল, ওই করবেটেই তিনটি হাতি নিয়ে এক বাঘিনীকে ইডেন গার্ডেনের চেয়েও ছোটো জংলা ঘাসজমির পরিধিতে আড়াই ঘন্টা ধরে খোঁজার পর আমরা শেষমেষ হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। বাঘিনী মহোদয়া গোটা সময়টা ঐ পরিসরেই ছিলেন এবং তার তাজা পদচ্ছাপের ওপর বারবার আরো তাজা পদচ্ছাপ এ কথাই প্রমান করেছিল যে তিন-তিনটি হাতির উপস্থিতিতে এলাকা ছেড়ে সরে পরতে না পারলেও, তাদের লেজে খেলিয়ে ম্যাডাম অনায়াসে অধরা (অর্থাত অদেখা) থেকে যান।

যে কোনো শিকারীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল আচমকা হামলা করার দক্ষতা । বিশেষত যারা একলা শিকার করে তাদের পারিপার্শ্বিকে মিশে গায়েব হয়ে থাকার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। বাঘ জঙ্গলের শ্রেষ্ঠ নিসঙ্গ শিকারী। যারা বলে জঙ্গলের রাজা হল যুথচারী সিংহ, তারা এসে দেখে যাক ভারতীয় অরণ্যের একচ্ছত্র বাঘ -- সুন্দরবনের ‘দখিনরায়’ (দক্ষিনে রাজত্ব যার), মধ্যপ্রদেশের ‘বাঘ দেও’ (বাঘদেবতা), কর্নাটক তটের ‘পিলিভুথা’ (সোনালী আত্মা)।

এতবড় রাজ্যপাট একা সামলানোর জন্য বাঘের দাঁত-নখ-শক্তি-ক্ষিপ্রতার তুলনাবিহীন সমন্বয়ও ঠিক যথেষ্ট নয়। তাই নিঃশব্দচারী বাঘকে তার শতাধীক সোনালী-কালো ডোরা ব্যবহার করে নিজের ১৫০-২৫০ কেজি অবয়বখানি শত্রু এবং শিকারের চোখের আড়ালে রাখার এক অভিমন্যু-সুলভ শিল্প আয়ত্ত করতে হয়েছে।

তাই জঙ্গলে গিয়ে বাঘের দেখা না পেলে একদম মুখ গোমড়া করে বেড়ানো মাটি করবেন না। যে কোনো মুহুর্তে তেনার দেখা পাওয়ার ছমছমে সম্ভাবনাই বাঘবনের আগমার্কা নিরন্তর রোমাঞ্চ । সেই অপেক্ষার ফাঁকে ফাঁকে প্রত্যেক ভিন্ন বাঘবনের জাদুবাক্স আপনাকে দেবে অসংখ্য আবিষ্কারের সুযোগ। শুখা পর্ণমোচী, আর্দ্র পর্ণমোচী, বর্ষাবন, চিরহরি, নোনা তটবন -– বাঘের বিচরণ সবরকম জঙ্গলেই। বড় মিঞার আশায় আশায় এতরকম অরণ্যকে জেনে ওঠার আনন্দই আপনার ব্যাঘ্রপ্রেম আর ধৈর্যের সবচেয়ে বড় পুরষ্কার।

আর যদি শিকে ছেঁড়ে? সে অভিগ্মতা অলৌকিক। মাইক সালিসবারি, বিবিসি ন্যাচারাল হিস্ট্রির অন্যতম কিংবদন্তী, বহু বছর আফ্রিকা আর উত্তর মেরুতে কাটিয়েছেন গরিলা, সিংহ আর মেরু ভল্লুকের মত অসাধারন প্রাণীদের নিয়ে কাজ করে। বছর তিনেক আগে রনথম্বরে প্রথমবার বাঘ দেখার পর দীর্ঘক্ষণ তার মুখে কথা সরেনি। অবশেষে তার অস্ফুট উচ্চারণে ছিল অসংলগ্ন মুগ্ধতা, তার অভিভুত চোখে জল।

রনথম্বরেই এক শীতের সকালে ঝানু ড্রাইভার রইস খানের ভরসায় পৌছেছি কাচিদা-র জঙ্গলে। ঘন্টা দুয়েক ঘোরাফেরার পর হঠাত চোখ পড়ল রাস্তার গজ কুড়ি দূরে অল্প জমে থাকা জলে। শুকনো পাতা আর পাথুরে প্রেক্ষাপটে প্রায় অদৃশ্য গলা অবধি ডুবে থাকা বাঘ। সেই প্রথম দেখলাম রইসের চোখে সামান্য সম্ভ্রম । “আপনে তো বড়িয়া স্পট কিয়া আজ!” বাঘের বদান্যতায় সেদিন থেকেই রইস-এর সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরু।

জঙ্গলে দক্ষ ড্রাইভার বা গাইডের ষষ্ঠেন্দ্রিয়ের কোনো বিকল্প নেই। রনথম্বরের রইস খান, নাগারহোলের বিক্রম নানজাপ্পা বা বান্ধবগড়ের সলিম খান-দের থেকে জঙ্গলের প্রথম পাঠ শিখেছেন অনেক নিয়মিত ট্যুরিস্ট। যেমন ধরুন, জঙ্গলে নজর রাখার পদ্ধতি । একই দিকে লাগাতার তাকিয়ে থাকলে, বেশীরভাগ সময় ধরতেই পারবেন না কোনখানে জানোয়ার জঙ্গলের রং-এ মিশে আছে। আপনাকে বারবার জঙ্গলের বিভিন্ন অংশে নজর ফেলতে হবে যাতে চোখ অভ্যস্ত না হয়ে যায় আর সামান্য নড়াচড়া-ও ধরা পড়ে । শুনতে সহজ কিন্তু গাইড আঙ্গুল দিয়ে পশুপাখি দেখালেও অনেক ট্যুরিস্টেরই খুঁজে পেতে বেশ সময় লেগে যায়।


কিন্তু জঙ্গলে শুধু দেখতে জানাই যে যথেষ্ট নয় তা টের পেয়েছিলাম বছর দশেক আগে সরিস্কায় । তিন বন্ধুর সাথে বিকেলের জিপ সাফারিতে বেরিয়েছি। কালিঘাটি পেরোতেই বাদিকের জঙ্গলে ময়ুরের অ্যালার্ম কল। একটু অপেক্ষা করে পাহাড়ি-র দিকে এগোতেই, আবার। এবার বাঁদর, ঠিক রাস্তার ওপরের দুটো গাছে। দুজন করে দুদিকের জঙ্গলে চোখ রেখে শ’খানেক গজ এগোতেই দর্শন দিলেন্ তিনি। আমি কিছু বোঝার আগেই পাশে বসা জয়দীপ ছিটকে দাঁড়িয়ে উঠল উত্তেজনায়। “দ্যাখ, দ্যাখ, দ্যাখ…” সেই আর্তনাদে চমকিত বাঘবাবাজি এক ঝলকে, আরেক বন্ধু সন্দীপন দেখে ওঠার আগেই, জঙ্গলে মিলিয়ে গেলেন। অনেক ভর্তসনা সহ্য করে সেদিন জয়দীপ শিখেছিল যে জঙ্গলে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য হাতের ইঙ্গিত বা কাঁধে টোকাই যথেষ্ট।

দেখা আর বলা ছাড়া, জঙ্গলে শুনতে জানাও জরুরী। অনেকেই জানেন যে অ্যালার্ম কল বা ত্রস্তডাক বাঘ বা অন্য শিকারী জানোয়ারের উপস্থিতি জানান দেয়। কিন্তু অ্যালার্ম কল মাত্রেই নির্ভরযোগ্য নয়। অনেক জংলী জানোয়ার-ই সহজে ভয় পায় । আমি চিতল হরিনকে ট্যুরিস্ট গাড়ি দেখেও অ্যালার্ম কল দিতে শুনেছি। বাঘের সন্ধানের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অ্যালার্ম কল বাঁদর আর শেয়ালের। কারন? জংগলে বাঁদর আর শেয়ালকে ভয় দেখায় বাঘ ছাড়া সাধ্য কার?

কিন্তু এত কান্ডের পরেও তো জঙ্গলে গিয়ে বাঘের দেখা নাই মিলতে পারে। তবে আর কি? সারাদিন বাঘবন চষে রাত্রে মন ভোলান বাঘের গল্পে ।

মনে আছে সারাদিন জঙ্গলে বাঘখোঁজা ঘুরে ক্লান্ত সন্ধ্যায় সর্পদুলির রেঞ্জ অফিসার উমেশ তিওয়ারি-র কোয়ার্টারে আমরা ক’বন্ধু জমিয়ে বসেছিলাম। সন্দীপন সেবারও সঙ্গে ছিল । তিওয়ারিজি-র হাতির পিঠে মানুষখেকোর মুখোমুখি হওয়ার রোমহর্ষক অভিগ্মতার গল্প কেউই ভুলিনি এখনো ।

সন্দীপন এখন মুম্বইবাসী। ওর বাঘের খোঁজ শুরু আট বছর বয়সে জলদাপাড়ায়, কিন্তু আজও কপালে দর্শন জোটেনি । শুনলাম এবছর কেরালায় সাইলেন্ট ভ্যালি ঘুরে এল। প্রতি বছরই একবার কোনো না কোনো জঙ্গলে ঢুঁ মারে। করবেটের কথা উঠলে ঠিক জিগ্মেস করে ফের একবার তিওয়ারিজি-র সঙ্গে বসা যায় কবে।

(লেখক একজন সংরক্ষণ সাংবাদিক এবং তথ্যচিত্রনির্মাতা)